শনিবার, ০১ Jun ২০২৪, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জিয়া ছাড়া কোনো সেক্টর কমান্ডার যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন না: মির্জা আব্বাস দুবাই নিয়ে তরুণীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি আবার চালুর ঘোষণা, চলবে যত দিন ‘অল আয়েস অন রাফা’ : বিশ্বজুড়ে যা প্রায় ৫০ মিলিয়ন লোক শেয়ার করছে মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বনই সরকার রাখেনি : রিজভী রোহিঙ্গাদের নিয়ে করা আশঙ্কার আলামত দেখা যাচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হতো এমন ১৪৮ অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়েছে ফেসবুক পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ শব্দ মুছে ফেলা দুঃখজনক : মোমেন পৃথিবীর কোনো দেশেই গণতন্ত্র পারফেক্ট নয় : ওবায়দুল কাদের রাত ১২টায় বন্ধ হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, বিমানবন্দরে আটকা হাজার হাজার কর্মী
গাজার হাসপাতালগুলোতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে ইসরাইলের হামলা

গাজার হাসপাতালগুলোতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে ইসরাইলের হামলা

স্বদেশ ডেস্ক:

ইসরাইলি বাহিনী এবং হামাসের রোববার প্রচণ্ড লড়াইয়ে গাজার হাসপাতালে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছে। চিকিৎসক ও সাহায্যকর্মীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যুদ্ধে বিরতি না হলে জরুরি জীবনরক্ষাকারী সুবিধাগুলোর অভাবে রোগীরা মারা যাবে।

এএফপি টেলিভিশনের চিত্রগুলোতে দেখা যায়, বোমা বিষ্ফোরণের উজ্জ্বল শিখাগুলো গাজা শহরের রাতের আকাশ আলোকিত করে প্রচণ্ড শব্দ শহর জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ইসরাইলের বিমান এবং স্থল অভিযান মূল চিকিৎসা স্থাপনার কাছে নিয়ে এসেছে।

চিকিৎসা সহায়তা গোষ্ঠী ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস রোববার ভোরে সতর্ক করে দিয়েছে, ‘যদি আমরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এই রক্তপাত বন্ধ না করি বা রোগীদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা না করি, তাহলে এই হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হবে।’

ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতাল ‘পুরোপুরি ঘিরে রাখা হয়েছে এবং কাছাকাছি বোমা হামলা চলছে।’ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া শনিবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক দল কাজ করতে পারছে না এবং কয়েক ডজন লাশ পড়ে আছে। তাদের সরিয়ে নেয়া বা কবর দেয়া যাচ্ছে না।’

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার সার্জন মোহাম্মদ ওবেদ বলেন, হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রায় ৬০০ পোস্ট-অপারেটিভ রোগী, ৩৭ থেকে ৪০ নবজাতক এবং ১৭ জন নিবিড় পরিচর্যায় থাকা রোগীর জন্য পানি, বিদ্যুৎ ও খাবার নেই, ইন্টারনেট সুবিধা নেই। হাসপাতালের চত্বরে আরো অগণিত মানুষ আশ্রয় খুঁজছে।

সার্জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি অডিও বার্তায় বলেন, আল-শিফা নবজাতক ইউনিটে তাদের ইনকিউবেটরগুলোর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে দুটি শিশু মারা গেছে এবং ভেন্টিলেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক ব্যক্তি মারা যায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের চারপাশে ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছি। তারা হাসপাতালের চারপাশের সবকিছুকে আঘাত করেছে।’

তিনি জানান, একজন স্নাইপার হাসপাতালের মধ্যে চার রোগীকে গুলি করেছে, এদের একজনের ঘাড়ে এবং আরেকজন পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। নিরাপত্তার জন্য গাজার আরো দক্ষিণে যাওয়ার চেষ্টাকারী লোকেরা বোমা হামলার সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল-শিফা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ডব্লিউএইচও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ডব্লিউএইচও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশুসহ শত শত অসুস্থ ও আহত রোগী এবং হাসপাতালের অভ্যন্তরে থাকা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে হামলা বা অবরোধের কথা অস্বীকার করেছে এবং বারবার হামাসকে কমান্ড সেন্টার এবং আস্তানা হিসেবে চিকিৎসা সুবিধা ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জাতিসঙ্ঘের মানবিক সংস্থা জানায়, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ২০টি ‘আর কাজ করছে না’।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি গাজা শহরের আল-কুদস হাসপাতালেও মানুষের সুরক্ষার জন্য ‘অবিলম্বে এবং জরুরি’ পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবিক সহায়তা গোষ্ঠীগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

রেড ক্রিসেন্ট শনিবার বলেছে, আল-কুদস হাসপাতালেও কাছাকাছি কামানের গোলাগুলিতে ‘হাসপাতাল ভবন কেঁপে উঠেছে। হাসপাতালে গুলি চালানো হয়েছে।’ যেখানে প্রায় ৫০০ রোগী এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় খুঁজছিল। এতে বলা হয়েছে, বুকের দুধের বিকল্পের অভাবের কারণে শিশুরা ডিহাইড্রেশনের মুখোমুখি হয়েছে।

যুদ্ধের কারণে অচল হয়ে পড়া অন্য হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল। যেখানে পরিচালক আতেফ আল-কাহলোট বলেন, জ্বালানির অভাবে তাদের ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট, মেডিক্যাল স্ক্যানার এবং লিফ্টগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিতে বাধ্য করেছে।

আল-কাহলোট বলেন, ‘হাসপাতালটি তার ক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নিয়ে কাজ করছে।’

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলের অভিযানে গাজায় ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে হাজার হাজার শিশুও রয়েছে।

হাসপাতালের পরিষেবা পতনের কারণে দু’দিন ধরে মৃত্যু সংখ্যার আপডেট করেনি মন্ত্রনালয়। তীব্র লড়াই গাজার দক্ষিণের দিকে মানুষের যাত্রা ত্বরান্বিত করেছে। গাজার দক্ষিণ রাফাহ প্রান্তে ভবনগুলোতেও হামলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, ৭ অক্টোবর থেকে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি গাজার জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান।

সঙ্ঘাত আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে যুদ্ধ বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। লেবাননের সাথে সীমান্ত বরাবর আন্তসীমান্ত গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে নিয়মিত।

সৌদি রাজধানী রিয়াদে আরব ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের এক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ইসলামী সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
সূত্র : বাসস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877